যেভাবে বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস

মার্জিয়া খান নুদার : প্রতিবছর ১৪ নভেম্বর ডায়াবেটিস সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বাড়াতে পালিত হয় বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য হলো ‘ডায়াবেটিসের যত্নে অ্যাক্সেস’। ডায়াবেটিস এক ধরনের দীর্ঘমেয়াদী অসুখ। আপনি যদি একবার এই অসুখে আক্রান্ত হন তাহলে পুরোপুরি মুক্তি পাওয়ার আর কোন উপায় নেই। রক্তের শর্করার মাত্রা অত্যাধিক বেড়ে যাওয়ার সমস্যাকে ডায়াবেটিস বলা হয়।

এই রোগ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে এর ক্ষতিকর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে। মাথা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত শরীরের সব অংশেই প্রভাব ফেলে ডায়াবেটিস। এমনকি চোখেরও মারাত্নক ক্ষতি করে থাকে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডায়াবেটিস অ্যান্ড ডাইজেস্টিভ অ্যান্ড কিডনি ডিজিজেস দ্বারা পরিচালিত এক মার্কিন সমীক্ষা অনুসারে, ডায়াবেটিস চোখের মারাত্মক ক্ষতি করে। যা দুর্বল দৃষ্টি থেকে একসময় অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। এ কারণে প্রথম থেকেই ডায়াবেটিস রোগীর চোখের যত্ন নেয়া আবশ্যক। যার ফলে অন্ধত্ববরণের আশঙ্কা কমবে।

 

ভারতেও এ বিষয়ে একটি জাতীয় সমীক্ষা করা হয়। সেখান থেকে জানা যায়, ওই দেশের ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির প্রাদুর্ভাব ১৬.৯ শতাংশ ও অন্ধত্বের পথে আছে ৩.৬ শতাংশ রোগী। তাই সময়মতো ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি শনাক্ত ও চিকিৎসা করা না হলে ডায়াবেটিস রোগীর মারাত্মক বিপদ হতে পারে। এজন্য অবশ্যই নিয়মিত চোখ স্ক্রিনিং করাতে হবে।

 

এ বিষয়ে ভারতের শার্প সাইট আই হাসপাতালের সিনিয়র রেটিনা কনসালট্যান্ট ডা. সিদ্ধার্থ সাইন জানান, গবেষণা অনুসারে, বর্তমানে ভারত বিশ্ব ডায়াবেটিক রাজধানী। শুধু ভারতেই নয় ডায়াবেটিস বিশ্বের নারী-পুরুষদের মধ্যে একটি খুব সাধারণ স্বাস্থ্যগত সমস্যা। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় না হলেও ডায়াবেটিসের কিছু লক্ষণ চোখেও প্রকাশ পায়।

 

কিভাবে ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করা যায় সে সম্পর্কে জানিয়ে ডা. সিদ্ধার্থ সাইন ব্যাখ্যা করেছেন, প্রায়ই অস্পষ্ট দৃষ্টি বা ঝপসা দেখার সমস্যা ডায়াবেটিসের লক্ষণ হতে পারে। ক্রমাগত এই সমস্যা বাড়তে থাকে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে গেলে আমাদের চোখের লেন্স শরীরের বিভিন্ন টিস্যুর মতোই প্রচুর পরিমাণে তরল টেনে নেয়। যা আমাদের ফোকাস করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে।

তিনি আরও বলেন, ডায়াবেটিসের কারণে আমাদের রেটিনায় নতুন রক্তনালী তৈরি হতে পারে। যদি নতুন রক্তনালীগুলো চোখের বাইরে তরলের স্বাভাবিক প্রবাহে হস্তক্ষেপ করে, তাহলে চোখের গোলায় চাপ তৈরি হতে পারে। ফলে গ্লুকোমার কারণে অপটিক নার্ভের ক্ষতি হয়। কারণ রক্তে অত্যাধিক চিনির কারণে ক্ষুদ্র রক্তনালিগুলো বাধাগ্রস্ত হয় ও রেটিনা তার রক্ত সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।

এ ছাড়াও কিছু উপসর্গ যেমন- চোখের সামনে ভাসমান কালো দাগ দেখা বা অন্ধকারে কোনো রং চোখে ভেসে ওঠা ইত্যাদি লক্ষণ মোটেও সুবিধার নয়। এটি হতে পারে ডায়াবেটিসের লক্ষণ। এই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জোর দিয়ে জানান, এ ধরনের পরিবর্তনগুলো যদি চিকিৎসা ছাড়াই চলতে থাকে তাহলে রোগীর স্থায়ী অন্ধত্ব ও দৃষ্টিশক্তি হ্রাসের ঝুঁকি বেড়ে যায়। মার্কিন সমীক্ষা অনুসারে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও চোখ সুস্থ রাখার সেরা উপায় হলো- নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল পরিমাপ করা ও নিয়ন্ত্রণে রাখা। ধূমপান ত্যাগ করা ও বছরে অন্তত একবার হলেও চোখ পরীক্ষা করা। সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস