ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাবে তা কল্পনা করিনি: বাঁধন

বিনোদন ডেস্ক : আজমেরী হক বাঁধন আলোচনায় নেই কিংবা উধাও এ লাক্সতারকা। প্রায় দুই বছর আগে এমন অনেক খবরই প্রকাশিত হয়েছিলো গণমাধ্যমে। সেসময় খবর প্রকাশ করেছিলো অনেকটা আড়ালে নতুন এক সিনেমার শুটিং করছেন বাঁধন। বাঁধন এতটুকুই জানিয়েছিলেন, ‘কিছু একটা করছি এতটুকু বলতে পারি। এই কাজটির জন্য নিজেকে অনেক পরিবর্তন করেছি, কষ্ট করেছি। সেই কষ্টের ফলটা পেতে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।’

অবশেষে সেই অপেক্ষার অবসান ঘটলো। শুধু অপেক্ষার অবসানই নয়, রীতিমতো বাজিমাত করলেন এ নায়িকা। নাম লেখালেন ইতিহাসের পাতায়। তার সাধনা ও পরিশ্রমের ফসল সেই সিনেমাটির নাম ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। এই সিনেমার মাধ্যমে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে প্রথমবারের কোনো সিনেমা ‘কান চলচ্চিত্র উৎসব’ এর জন্য অফিসিয়ালি সিলেক্টেড হয়েছে। আসন্ন ৭৪তম কান চলচ্চিত্র উৎসবে আঁ সার্তেইন রিগার্দ বিভাগে নির্বাচিত হয়েছে নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মাদ সাদ’র এ ছবি।

এমন অর্জনে শুধু সিনেমার কলাকুশলী কিংবা টিমের সবাই-ই নয়, আনন্দিত হয়েছে পুরো চলচ্চিত্র অঙ্গনসহ পুরো বাংলাদেশ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন খুশির খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন দেশের সব তারকা থেকে শুরু করে শোবিজ সংশ্লিষ্টরা। স্বভাবতই বেশ আনন্দ অনুভব করছেন ছবিটির নায়িকা বাঁধন। আনন্দ অনুভব করলেও সেটি প্রকাশেও কোথায় যেন আটকে যাচ্ছেন তিনি।

কারণ, এমন অর্জনে ঠিক কতটা আনন্দিত হওয়া যায় সেই অনুভূতি প্রকাশের ভাষাটাই হারিয়ে ফেলেছেন বাঁধন। তিনি বলেন, আমি যতটা আনন্দিত অনুভব করছি তার একভাগও বোধহয় আমি প্রকাশ করতে পারছি না! ইতিহাসের অংশ হবার সৌভাগ্য হয়তো সবার হয়না, আমি সেটার অংশ হতে পেরেছি, এটাই আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চলচিচত্র উৎসবে আমার সিনেমা সিকেশন হয়েছে, আমাদের দেশের নাম উঠেছে; এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে! এত বড় খুশির খবর কীভাবে অনুভব করতে হয় কিংবা প্রকাশ করতে হয়; সেটা আমার জানা নেই। হাজার হাজার অসংগতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আমাকে কাজটা করতে হয়েছে, যার কারণে এমন একটা রেজাল্ট পেলাম।

কাজটি যখন করছিলেন তখন কি বুঝতে পেরেছিলেন যে, ছবিটি এরকম কোনো ইতিহাস করবে? বাঁধন বলেন, আমি যখন কাজ করছিলাম তখন কিছুটা বুঝতে পেরেছিলাম যে ছবিটি বাংলাদেশের বুকে আলাদা করে একটা নাম তৈরি করবে কিন্তু এটা বুঝতে পারিনি যে, এটা পৃথিবীর বুকেই নাম লেখাবে। তিনি আরও বলেন, গত বছর থেকেই এটা নিয়ে কথা চলছিলো যে, এটা কানে যাবে নাকি অন্য কোথাও! অনেক বড় ফিল্ম ফেস্টিভ্যালসেও এটার অফিশিয়াল সিলেকশন ছিলো।

আমি তখন শুধু এটাই দেখতেছিলাম যে, আমার চলচিচত্র অর্থাৎ যেই চলচিচত্রটার কেন্দ্রীয় চরিত্রই আমি; সেই ছবিটা নিয়ে পৃথিবীর দুইটা বড় বড় ফেস্টিভ্যাল চুজ করছে যে ছবিটা কোথায় যাবে! এটা হজম করার শক্তি আমার ছিলো না। এত বড় কিছু চিন্তা করার শক্তিটাও আমার ছিলো না। এটার পুরো ক্রেডিট ছবির নির্মাতার, যার এই ভিশনটা ছিলো। আমি আমার ব্যক্তিগত ঝামেলা, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, অবসাদে ভোগা; সবকিছু মিলিয়ে এমন একটা সিচুয়েশন পার করেছি যেটা সবাই জানে।

সেসময়টাতে ব্যক্তি বাঁধনকে কোনোভাবে ডিল করা যে কারো জন্য প্রায় অসম্ভব ছিলো। কিন্তু সেই আমাকেই ওইসময়টাতে হ্যান্ডেল করেছেন সাদ। তিনি আমার মধ্যে রেহানা চরিত্রটাকে দেখতে পেয়েছেন। উনি বিশ্বাস করেছেন যে, আমাকে দিয়েই এটা সম্ভব। একজন আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ স্বাদ যে আমার মধ্যে এমন একটা চরিত্র দেখতে পেয়েছেন, এটা আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার। শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বাঁধন বলেন, শুটিং আমাদের কাছে অনেকসময় আনন্দের মনে হলেও এই কাজের শুটিংটা আমাদের কাছে আনন্দের ছিলো না।

এটার অভিজ্ঞতা নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতে পারবো। আমাকে দিয়ে এমন কাজ করানো অন্য কারো পক্ষে সম্ভব না, এটা শুধু সাদই পেরেছেন। কারণ, একজন অভিনয়শিল্পী কতটুকু অভিনয় করবেন, সেটা নির্ভর করে পরিচালকের ওপর। যেটার প্রচলন আমাদের দেশে নেই। আমাদের এখানে মনে করা হয় যে, অভিনয়শিল্পীরা অভিনয় ফাটিয়ে করেছেন। কিন্তু না, আসলে পরিচালক তার পরিচালনা ফাটিয়ে দিয়েছেন। শিল্পী নিজের মতো করে চরিত্র হয়ে ওঠতে পারে না। চরিত্র হয়ে ওঠতে হয় পরিচালকের চোখ দিয়ে, তার মতো করে।

শিল্পী শুধু চরিত্রের সাথে কানেকশনটা করে, বাকি কাজ কিন্তু পরিচালক করে।এই ছবিটিতে ৩/৪টি বিশেষ দৃশ্য রয়েছে যেগুলো করতে গিয়ে আমি মানসিকভাবে, শারীরিকভাবে এত বেশি ক্লান্ত ছিলাম, আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। দৃশ্য করার পর পুরো ইউনিট একদম সাইলেন্ট হয়ে যেত, কারণ কারো মুখ দিয়েই কোনো কথা আসছিলো না। দৃশ্যগুলো হজম করার মত শক্তি ছিলো না আমাদের মধ্যে। ওই দৃশ্যগুলো করার পর আমার স্বাভাবিক হতে পুরো একদিন সময় লেগেছে।

ছবিটির যে আন্তর্জাতিক প্রযোজক এটা দেখার পর বলেছেন যে, এই দৃশ্য সহ্যক্ষমতার বাইরে। সেই দৃশ্যগুলো আমি এখনও স্ক্রিনে দেখতে পারি না। আমার সেই শক্তি নেই। আমার অভিনয় নিয়ে কোনো ব্যাকগ্রাউন্ড নেই, কোনো টেকনিকও জানিনা। যা হয়েছে, যতটুকু হয়েছে এখানে সব সাদের কারণেই সম্ভব হয়েছে। সে সেটা করাতে পেরেছে আমাকে দিয়ে।